গুছিয়ে কথা বলার ট্রিকস

দৈনন্দিন জীবনে আমরা অনেক মানুষের সাথে কথা বলি।সবার সব কথা আমাদের মনে থাকে না বা আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলে না। কিন্তু কিছু মানুষের কথা, ব্যক্তিত্ব আমাদের জীবনে অনেক প্রভাব বিস্তার করে। তার কারণ তাদের কথা বলার ধরন, বাচনভঙ্গি, গুছিয়ে বলা।

আসলে গুছিয়ে কথা বলাটা একধরনের আর্ট। যা আমরা অনেকেই পারিনা। দেখবেন  যারা সুন্দরভাবে গুছিয়ে কথা বলতে পারেনা,তারা যত গুরুত্বপূর্ণ কথাই বলুক না কেন কেউ তেমন একটা গ্রাহ্য করে না। অন্যদিকে আমরা অনেকের অপ্রয়োজনীয় কথাও কিন্তু খুব গুরুত্ব দিয়ে শুনি। এর কারন তার বাচনভঙ্গি,গুছিয়ে বলা। আবার দেখবেন একই কথা কেউ একজন তাড়াহুড়ো করে বললো অন্যজন গুছিয়ে বললো, সবাই কিন্তু গুছিয়ে বলা ব্যক্তির কথাই প্রাধান্য দেয়।

আমাদেরকে প্রতিনিয়তই অফিসের বস, ক্লায়েন্ট, টিচার ইত্যাদি বিভিন্ন মানুষকে কনভিন্স করতে হয়। আর এর জন্য অবশ্যই গুছিয়ে কথা বলা প্রয়োজন হয়।

আজকে আমি আপনাদের সাথে কিছু টিপস শেয়ার করবো যেগুলো ফলো করলে আপনিও খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে কথা বলতে পারবেন।

যেই বিষয়ে কথা বলবো ওই বিষয় অনেক জ্ঞান অর্জন করা:

গুছিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে যে বিষয়ে আমরা কথা বলতে ইচ্ছুক সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানা দরকার।  উক্ত বিষয়ের সব খুটিনাটি ভালোভাবে জানা, যাতে করে কেউ আপনার কথায় ভুল ধরতে না পারে বা আটকাতে না পারে৷  কথা বলার আগে আপনার মূল পয়েন্টগুলো চিন্তা করে নেওয়া উচিৎ । আপনি কী বলতে চান, কীভাবে শুরু করবেন, এবং কীভাবে শেষ করবেন তা ভাবুন।

আত্মবিশ্বাসী হওয়া:

খেয়াল করে দেখবেন আমাদের আশেপাশের যে মানুষ গুলা খুব আত্মবিশ্বাসী, তারাই জীবনে উন্নতি করতে পারছে। কোন কাজ করা বা গুছিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী হওয়া অতি প্রয়োজন। সাধারণত কয়েকটি জিনিস মানুষের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। যেমন – জ্ঞান,স্কিল, টাকা ইত্যাদি। তাই নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে যতো পারা যায় জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আর জ্ঞান অর্জনের সর্বোত্তম মাধ্যম হলো বই।

আঞ্চলিকতা পরিহার করা:

গুছিয়ে বলার ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতার টান পরিহার করার চেষ্টা করুন। প্রথমে কষ্ট হলেও মাসখানেক চেষ্টা করলে এটি পরিবর্তন  করা সম্ভব।
সেই সাথে স্পষ্টভাবে সঠিক শব্দ উচ্চারন করে কথা বলার চেষ্টা করতে হবে

ইনফরমেটিভ কথা বার্তা বলা :

হাবিজাবি কথা বার্তা  অনেকেই শুনতে আগ্রহী না। কেউ যখন কথা বলার সময় বিভিন্ন ইনফরমেশন এড করে বলে তখন আমরা তার কথা খুব মন দিয়ে শুনি। তাই চেষ্টা করুন কথা বলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন তথ্যবহুল কথা বলতে।

প্রচুর বই পড়া :

জ্ঞান অর্জন করার ক্ষেত্রে বইয়ের বিকল্প কিছুই হতে পারে না। একাডেমিক বইয়ের বাইরে নন একাডেমিক বই যতো বেশি পড়া যায় ততোই ভালো। তাই বলে আমি একাডেমিক বই পড়তে মানা করছি না।  ফিকশন, নন-ফিকশন, গোয়েন্দা, হরর যার যে ধরনের বই পছন্দ সে ওই ধরনের বই ই পড়তে পারেন। গুছিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে বই পড়াটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমাদের উচিত যতো বেশি পারা যায় বই পড়া।আবার যারা পাবলিক স্পিকিং এ ভয় পান তারা প্রতিদিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অন্তত ৫ মিনিট যে কোন গল্প/কবিতা পড়বেন। দেখবেন এক মাসের মধ্যেই আপনার এই ভয় কেটে যাবে।

গল্প আকারে কথা বলা:

নরমালি আমরা কেউ ই উপদেশ শুনতে পছন্দ করি না৷ কিন্তু আমরা যদি কথা বলার সময় উপদেশ না দিয়ে গল্প আকারে বলি তাহলে সেটা যেমন  মাধুর্যযুক্ত হয় তেমনি শ্রোতাও খুব মনোযোগ দিয়ে শুনে।

আই কন্টাক্ট রাখা  :

কথা বলার ক্ষেত্রে শ্রোতার চোখে চোখ রেখে কথা বলাটা অন্তত গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন, কেউ আপনার সাথে কথা বলছে, এখন সে যদি আপনার দিকে না তাকিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে কথা বলে তাহলে আপনি একে তো তার কথায় মনোযোগী হতে পারবেন না তার উপর অসম্মান বোধ ও করবেন। তাই গুছিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে আই কন্টাক্ট রেখে কথা বলাটা জরুরি। তাছাড়া আপনি যা বলছেন তা সমর্থন করার জন্য নির্দিষ্ট অঙ্গভঙ্গি এবং মুখের অভিব্যক্তি ব্যবহার করা প্রয়োজন।

তাড়াহুড়ো না করা এবং শব্দভান্ডার বাড়ানো :

অনেকেই আমরা কথা বলার সময় দ্রুত বলে শেষ করে ফেলি। কি বলছি নিজেই ঠিকমতো বুঝি না।তাছাড়া দ্রুত কথা বললে শব্দ বা বাক্য ভুল হতে পারে।গুছিয়ে কথা বলতে  তাড়াহুড়ো পরিহার করে ধীর ও পরিষ্কার ভাবে কথা বলতে হবেএবং কোথায় কতোক্ষণ থামতে হবে তা জানতে হবে। সহজ ভাষায় এবং স্পষ্টভাবে কথা বলার চেষ্টা করতে হবে । যতো পারা যায় জটিল শব্দ বা বাক্য ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে।

শ্রবণ দক্ষতা উন্নত করা:

ভালো শ্রোতা হওয়া কথোপকথনে সহায়ক হতে পারে, কারণ এটি আপনাকে অন্যদের মতামত বুঝতে সাহায্য করবে এবং সঠিকভাবে প্রতিউত্তর করতে সক্ষম করবে।

শ্রোতার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে:

গুছিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে মুখ এবং ব্রেইন একসাথে কাজে লাগাতে হবে।শ্রোতাদের সাড়া এবং প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করতে হবে। তাদের বুঝতে সাহায্য করার জন্য প্রয়োজনে বক্তব্য পরিবর্তন করতে হবে।

গুছিয়ে কথা বলে এমন কাউকে অনুসরণ করা:

আধুনিক বিশ্বে সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে শত শত ইউটিউবার,ইনফ্লুয়েন্সারদের ছড়াছড়ি। এদের মধ্যে নিশ্চয়ই কারোর কথা বলার ধরন, বাচনভঙ্গি আপনার ভালো লাগে। সাজিয়ে গুছিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে আপনি আপনার প্রিয় ইউটিউবারকে ফলো করতে পারেন।

আসলে গুছিয়ে কথা বলাটা খুব কঠিন কোন কাজ নয়।এটি সাধনার বিষয়। কিছুদিন প্র‍্যাক্টিস করলে আপনিও খুব সুন্দরভাবে কথা বলতে পারবেন।

Related Posts

4 Comments

Leave a Reply